ইংল্যান্ডে করোনায় সাদাদের চেয়ে বাংলাদেশি-পাকিস্তানিদের মৃত্যু দ্বিগুণইংল্যান্ড ও ওয়েলসে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সাদাদের চেয়ে কালোদের মৃত্যুর হার চার গুণ বেশি। সাদাদের চেয়ে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি পুরুষদের মৃত্যুর হার প্রায় দ্বিগুণ বেশি এবং নারীদের ক্ষেত্রে এ হার দেড় গুণের কিছু বেশি। ইংল্যান্ডের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় দ্য অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের (ওএনএস) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার তথ্যকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাপন প্রক্রিয়া ভেদেই শুধু প্রভাব ফেলেনি, বয়স, প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য সামাজিক–জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করেও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে তফাত পাওয়া গেছে। এসবের ওপর ভিত্তি করে এখন পর্যন্ত সাদাদের চেয়ে কালো মানুষদের মৃত্যুর হার প্রায় দ্বিগুণ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদনে জীবনযাপনের পার্থক্য বলতে, সাদা ও কালোদের জীবনযাপনে অর্থনৈতিক বৈষম্য, সুন্দর বাসস্থানের অভাব, গাদাগাদি করে বসবাস, দারিদ্র্য, আগে থেকেই রোগে ভোগার বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে সাদাদের চেয়ে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি। নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ১ দশমিক ৬ গুণ বেশি। এ ছাড়া চীনাসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি সাদা বা শ্বেতাঙ্গদের মতোই। ওএনএস বলেছে, এই গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট কোভিড-১৯–এ মৃত্যুর হারে আংশিক প্রভাব ফেলছে। তবে বাকি অংশের মৃত্যুর বিষয়ে এখনো কোনো ব্যাখ্যা নেই। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত মাসে তাদের গবেষণা থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো করোনাভাইরাসের বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের যেসব এলাকায় জাতিগত সংখ্যালঘুদের বসবাস, বেশি সেখানে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। থিঙ্কট্যাংক রানিমেডে ট্রাস্টের উপপরিচালক জুবাইদা হকের ভাষায়, এই পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, `বর্ণবৈষম্য ও অসমতার বিষয়টি আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। বিশেষ করে বাসস্থানের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোভিড-১৯ ঝুঁকির ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানগত মডেলিংয়ে এসব বিষয় জবাবদিহিতে আনা হচ্ছে না।` বাসস্থান বিষয়ে ইংলিশ হাউজিং জরিপ অনুসারে, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গদের বাসস্থানের ক্ষেত্রে মাত্র ২ শতাংশ গাদাগাদি করে বসবাস করে। সেখানে বাংলাদেশি বাসস্থানগুলোর মধ্যে এ হার ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানিদের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ। অথচ ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এনএইচএসে সম্মুখ ভাগের যোদ্ধা হিসেবে ওই গোষ্ঠীগুলোর মানুষের অংশগ্রহণই বেশি। প্রায় ২১ শতাংশ কর্মী বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের জনসংখ্যার দিক দিয়ে তারা মাত্র ১৪ শতাংশ। সাদাদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মধ্যে বেকারত্ব এবং শিশু–দারিদ্র্যের হারও অনেক বেশি। জোসেফ রাউনট্রি ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলেন বারনার্ড গবেষণার তথ্য নিয়ে বলেছেন, `পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমরা একই ঝড়ের মধ্যে থাকলেও, সবাই একই নৌকায় নেই।` গত ২ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় দেখা গেছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ওপর কোভিড-১৯ কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলেছে। কৃষ্ণাঙ্গ এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর স্বাস্থ্য অসমতার বিষয়গুলো উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছিল। বিশেষ করে তাদের হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিস থাকার বিষয়গুলো উদ্বেগ তৈরি করেছিল। পরিসংখ্যানে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি মানুষের ক্ষেত্রে যতটা ঝুঁকি বা মৃত্যুর হার দেখা গেছে, তার চেয়ে কম দেখা গেছে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে। সাদাদের তুলনায় ভারতীয় পুরুষদের মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি এবং নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ১ দশমিক ৪ গুণ বেশি। চীনা নাগরিকদের মধ্যে পুরুষদের মৃত্যুর হার সাদাদের চেয়ে ১ দশমিক ২ গুণ বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুধু চীনা নারীদেরই সাদাদের চেয়ে মৃত্যুর হার কম। ইউনিভার্সিটি হসপিটাল বার্মিংহামের ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রিনোলজি বিষয়ের অধ্যাপক ওয়াসিম হানিফ কোভিড-১৯–এ বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের মৃত্যুর হারের পার্থক্য নিয়ে ওএনএসের ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, ব্রিটেনে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আগে থেকেই অন্যান্য রোগে ভোগার পার্থক্যের বিষয়টি ওএনএসের পরিসংখ্যানে তুলে আনা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মানুষের সাদাদের তুলনায় আগেভাগে ডায়াবেটিস শুরুর হার তিন থেকে চার গুণ বেশি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ হার তিন গুণ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে এ হার দ্বিগুণ বেশি। |